শিক্ষাকে একটি জাতির মেরুদন্ড বলা হয়। আর এক জন শিক্ষক জাতির এই মেরুদন্ডকে মজবুত করে গড়ে তোলে। এক জন শিক্ষক নিজ হাতে একটি দেশের চতুর্থ শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা তৈরি করে থাকে। এক জন মানুষকে প্রকৃত রূপ দিতে একজন শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। এক জন শিক্ষক পদমর্যাদা অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ এক জন শিক্ষকের পদমর্যাদার উপর তিনি কত তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন পাবে তা নির্ভর করে।
একটি জাতিকে সুন্দররূপে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এক জন শিক্ষক প্রাণপণে চেষ্টা করে যায়। বেসরকারি হাই স্কুলের এক জন জুনিয়র শিক্ষকের চাকরি শুরুর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা এবং এক জন প্রধান শিক্ষকের চাকরির শুরুর মূল বেতন ২৯ হাজার টাকা হয়ে থাকে। বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকদের সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকদের মতো মূল্যায়ন করা হয় না। সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকদের তুলনায় বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বরাবরই বঞ্চিত থেকে যায়।
বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকদের বেতন কত
একটি শিক্ষিত জাতি তৈরি করতে শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। এক জন শিক্ষক অল্প টাকার বেতনে সম্পূর্ণ ঘুষ মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ এখনো পর্যন্ত সরকারি সেবা তুলনামূলক পায় না। এ নিয়ে বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ বেশ কয়েকবার আন্দোলন মুখর হয়েছে।
তবে এ আন্দোলনে বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক গণ আশানুরূপ ফলাফল পায়নি। বেসরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৭ তম গ্রেড অনুযায়ী ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ৮ তম গ্রেড অনুযায়ী এবং সিনিয়র শিক্ষক ৯ তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। এছাড়া বেসরকারি হাই স্কুলের জুনিয়র শিক্ষক ১০ তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকে।
বেসরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বেতন কত
এম পি ও ভুক্ত প্রতিটি হাই স্কুলের এক জন প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ স্কুলটি পরিচালনা করে থাকে। একটি স্কুলের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সকল কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক পরিচালনা করে থাকে। এক জন বেসরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগদান করে থাকে।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পাশ হওয়া গেজেট অনুযায়ী এক জন বেসরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৭ তম গ্রেডের বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ বেসরকারি হাই স্কুলের এক জন প্রধান শিক্ষকের চাকরির শুরুর মূল বেতন ২৯ হাজার টাকা হয়ে থাকে। বেসরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরির শুরুর মূল বেতন বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তীতে সর্বোচ্চ ৬৩,৪১০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বেসরকারি হাই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন
এম পি ও ভুক্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সকল কাজে সহায়তা প্রদান করা সহকারী প্রধান শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব। এছাড়া ক্লাস রুটিন তৈরি থেকে শুরু করে স্কুলের যাবতীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা সহকারীর প্রধান শিক্ষকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এক জন সরকারি প্রধান শিক্ষক বেসরকারি হাই স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
এম পি ও ভুক্ত হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে প্রধান শিক্ষকের পরবর্তী গ্রেড অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ এক জন সহকারী প্রধান শিক্ষক ৮ তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন পেয়ে থাকে। বেসরকারি হাই স্কুলের কর্মরত সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চাকরির শুরুর বেতন ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫,৪৬০ টাকায় দাড়ায়।
বেসরকারি হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকের বেতন কত
এম পি ও ভুক্ত হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক গণ সহকারী প্রধান শিক্ষকের পরবর্তী ধাপের কর্মকর্তা। এক জন বেসরকারি হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এক জন সিনিয়র শিক্ষক ৯ তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ বেসরকারি হাই স্কুলের এক জন সিনিয়র শিক্ষক চাকরির শুরুতে ২২ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ ৫৩,০৬০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বেসরকারি হাই স্কুলের জুনিয়র শিক্ষকের বেতন কত
এক জন জুনিয়র শিক্ষক বলতে সদ্য জয়েন করা শিক্ষকদের বোঝানো হয়ে থাকে। এক জন জুনিয়র শিক্ষক পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পাস হওয়া গেজেট অনুযায়ী এক জন জুনিয়র শিক্ষক ১০ তম গ্রেডের বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ এক জন জুনিয়র শিক্ষকের চাকরি শুরুর প্রথম বেতন ১৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ৩৮,৬৪০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক কত টাকা ভাতা পায়
এক জন বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক এর তুলনায় কম টাকা ভাতা পেয়ে থাকে। এক জন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। যেখানে এক জন বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক মাত্র ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পায়। সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ মূল বেতন অনুযায়ী ১০০% উৎসব ভাতা পেলেও বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ কেবল মাত্র মূল বেতনের ২৫% হারে উৎসব ভাতা পেয়ে থাকে।
এছাড়া বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকগণ বাংলা বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মূল বেতনের ২০% হারে বৈশাখী ভাতা পেয়ে থাকে। সরকারি হাই স্কুলের এক জন শিক্ষক বাৎসরিক ৫% হারে অথবা ৫% এর বেশি বেতন বৃদ্ধি পেলেও বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকদের বেতন কেবলমাত্র ৫% হারেই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ মূল বেতনের ৪৫% ও ৫০% এবং ৬০% হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা পেয়ে থাকে। অপর দিকে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকগণ মাত্র ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পান।
বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক কত টাকা পেনশন পায়
এক জন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই এক জন শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব। তবে বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মতো পেনশনের দিক থেকেও বঞ্চিত। সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ অবসরের পর প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতা সহ মূল বেতনের ৫০% হারে পেয়ে থাকে।
অবসরের পর এই ভাতা থেকে বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক গণ কে বঞ্চিত করা হয়। অপরদিকে সরকারি স্কুলের শিক্ষক গণ এক কালীন ৪০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে। তবে এক জন বেসরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক এক কালীন মাত্র কয়েক লাখ টাকা পেয়ে থাকে।
বলা হয়ে থাকে পিতা মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান। একটি অশিক্ষিত জাতিকে শিক্ষিত জাতিতে রূপান্তর করার মত যাদু শিক্ষকদের হাতে রয়েছে। শিক্ষকদের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। কেননা এক জন শিক্ষকের হাতে একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। এক জন শিক্ষকের পদমর্যাদা অনুযায়ী গ্রেড নির্ধারিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে এই গ্রেড অনুযায়ী বেতন ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে।