বর্তমান বাংলাদেশে চাকরির বাজারের পরিস্থিতি অনেক খারাপ। যার ফলে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম উচ্চ ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও নিম্ন শ্রেণীর পদে চাকরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। নিম্ন শ্রেণীর চাকরি গুলোর মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিদর্শিকা পদের চাকরিতে মানসম্মত রয়েছে। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সরকারি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পরিদর্শিকা পদে আসন সংখ্যার তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হয়ে থাকে।
বর্তমানে সরকারি প্রত্যেকটি অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে ২০ টি গ্রেড অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়। একজন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শিকা পদে কর্মরত কর্মকর্তা ১৬ তম গ্রেড অনুযায়ী প্রতি মাসে নূন্যতম ৯,৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২২,৪৯০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে। একজন পরিদর্শীকার মূল বেতন অনুযায়ী ৫% হারে প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এছাড়া তিনি প্রতি মাসে মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা বিভিন্ন ভাতা ও বোনাস হিসাবে পেয়ে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকার কাজ কি
বাংলাদেশ সরকার শিশু মৃ*ত্যু হার কমানোর জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক অন্যতম পদ হলো পরিদর্শিকা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শিকা মূলত নিজ এলাকায় মা ও শিশু বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সকল কার্যক্রম পরিদর্শন করে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা বেতন কত
বাংলাদেশ সরকার মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। প্রতিটি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে বিভিন্ন পদে একাধিক কর্মকর্তা রয়েছে। এ সকল কর্মকর্তা পদ অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকে। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের একজন পরিদর্শিকা প্রতি মাসে ন্যূনতম ৯,৩০০টাকা এবং প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২২,৪৯০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণকালীন বেতন কত
একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা সরাসরি নিয়োগ পায় না। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ পেতে প্রথমে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিদর্শিকা পদ প্রার্থীদের কে দীর্ঘ ১৮ মাস ব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণের পর পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিদর্শিকা পদপ্রার্থী চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগ পেয়ে থাকে।
একজন পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময় কোন বেতন পায় না। অর্থাৎ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শিকা পদ প্রার্থীকে ১৮ মাস কোন বেতন প্রদান করা হয় না। তবে তারা এই ১৮ মাসে প্রতি ছয় মাস অন্তর একটি প্রশিক্ষণ ভাতা পেয়ে থাকে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শিকা পদ প্রার্থী প্রশিক্ষণ চলাকালীন ৬ মাস পর পর সর্বমোট ১২,৮০০ টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা পাবে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদ কত তম গ্রেড
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার দ্বারা অনুমোদিত একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়। বেতন স্কেলটি পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়ে আসছে। গ্রেডের সাহায্যে একজন কর্মকর্তার বেতন ও ভাতা এবং বোনাস কোন পর্যায়ে আছে তা বোঝা যায়। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের একজন পরিদর্শিকা ১৬ তম গ্রেড অনুযায়ী বেতন, বোনাস ও অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদের বেতন স্কেল
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাদের পদ অনুযায়ী মোট ৪ টি শ্রেণী অনুযায়ী বেতন প্রদান করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের একজন পরিদর্শিকা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে থাকে।পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা চাকরির শুরুতে ৯,৩০০ টাকা এবং চাকরির শেষের দিকে সর্বোচ্চ ২২,৪৯০ টাকা বেতন পেয়ে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা বেতন স্কেল ৯৩০০- ৯৭৭০- ১০২৬০- ১০৭৮০- ১১৩২০- ১১৮৯০- ১২৪৯০- ১৩১২০- ১৩৭৮০- ১৪৪৭০- ১৫২০০- ১৫৯৬০- ১৬৭৬০- ১৭৬০০ -১৮৪৮০- ১৯৪১০- ২০৩৯০- ২১৪১০- ২২৪৯০
পরিবার পরিকল্পনার পরিদর্শীকা পদে ভাতা কত টাকা
প্রতিটি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর মূলত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ও জেলা সিভিল সার্জন এর অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শিকা পদের কর্মকর্তা বাৎসরিক এবং মাসিক বিভিন্ন ভাতা পেয়ে থাকে। একজন পরিদর্শিকা গ্রেড ১৬ অনুযায়ী ভাতা পেয়ে থাকেন।
- মূল বেতন-৯৩০০ টাকা (মাসিক)।
- বাড়ি ভাড়া ভাতা-৬০৪৫ টাকা মাসিক (ঢাকা সিটিতে হলে ৬৫% মূল বেতনের)।
- চিকিৎসা ভাতা-১৫০০ টাকা (মাসিক)।
- যাতায়াত ভাতা -৩০০ টাকা (মাসিক)।
- টিফিন ভাতা-২০০ টাকা (মাসিক)।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে বোনাস কত টাকা
বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর একটি সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শিকা পদে ১৬ তম গ্রেড অনুযায়ী বছরে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ উপলক্ষে দুই বার সর্বমোট ১ ৮,৬০০ টাকা পর্যন্ত বোনাস পায়। এছাড়া বাংলা বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মূল বেতন অনুযায়ী ২০% হারে বৈশাখী বোনাস পেয়ে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শীকা পদের পদোন্নতি
একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের একজন পরিদর্শিকা পদোন্নতি পায় না বললেই চলে। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিদর্শিকা পদে কর্মরত কর্মকর্তা গন বাংলাদেশ সরকারের নিকট পদোন্নতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। তবে তারা এখনো আন্দোলন করে সফলতা পায়নি।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদের সুযোগ সুবিধা
ইউনিয়ন ভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র গুলো সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদের চাকরিটি সরকারি হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। পরিদর্শিকা পদে কর্মরত কর্মকর্তা গন মাসিক ও বাৎসরিক বোনাস এবং পেনশন সহ এককালীন কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক কি কি সেবা প্রদান করে
ইউনিয়ন ভিত্তিক পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র গুলো মূলত সুস্থ জন্মদান এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য স্থাপন করা হয়েছে। একজন পরিদর্শীকা নিজ ইউনিয়নে সপ্তাহে দুই দিন শিশুদের টিকা দান কার্যক্রমে অংশ নেয়। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের একজন পরিদর্শিকা নিজ কর্ম এলাকার প্রতিটি সক্ষম বিবাহিত দম্পতির তথ্য রেজিস্ট্রেশন করে থাকে।
ভিটামিন এ ও ক্যাম্পেইন সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন পরিদর্শকের অন্যতম প্রধান কাজ। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। এ সকল সেবা প্রদান ও দেখা শোনা করা পরিদর্শীকার অন্যতম দায়িত্ব।
- গর্ভবতী মহিলাদের সেবা প্রধান করা এবং প্রসবকালীন সচেতনতা তৈরি করা।
- গর্ভকালীন সেবা দান করা ও ইপিআই কেন্দ্রে সেবা প্রদান করা।
- নবজাতকের সেবা দান করা ও (০-৫) বছর শিশু সেবা প্রদান করা।
- ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিতরণ এবং মিসোপ্রেস্টাল ট্যাবলেট বিতরণ করা।
- খাওয়ার বড়ি বিতরণ সহ ইত্যাদি সেবা প্রদান করে থাকে।
একজন সরকারি চাকরিজীবী উচ্চ বেতন স্কেলের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও বোনাস সহ নানা দিক থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। যার ফলে বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরির চাহিদা অনেক গুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরির চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতিও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।