বাংলাদেশে শিক্ষার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশ শিক্ষিত জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও বেকারত্বের হার কমেনি। বাংলাদেশের বেতন স্কেলের ১৪ তম গ্রেডের সরকারি চাকরি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ । ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ সরকার দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে থাকে। ১৪ তম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার সর্বনিম্ন মাসিক বেতন নূন্যতম ১০,২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মাসিক বেতন ২৪,৬৮০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি খুবই সীমিত। তবে অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে ১৩ তম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৪ তম গ্রেডের চাকরিতে বেসিক বেতন প্রথমে কম ধরা হয়ে থাকে। তবে বেসিক বেতনের প্রায় সমপরিমাণ টাকা ভাতা হিসেবে প্রদান করা হয়ে থাকে। যার ফলে ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা গণ পরিবার নিয়ে সচ্ছলতার সাথে জীবন যাপন করতে পারে। এছাড়া ১৪ তম গ্রেডে একাধিক সুবিধা থাকার ফলে ১৪ তম গ্রেডের চাকরির চাহিদা পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৪ তম গ্রেডে বেতন কত
বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। ১৪ তম গ্রেডে চাকরি পেতে বর্তমানে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ১৪ তম গ্রেডের চাকরি মূলত তৃতীয় শ্রেণীর মাঝামাঝি স্তরের হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অনেক বেকার তরুণ বেকার জীবন থেকে মুক্তি পেতে ১৪ তম গ্রেডের চাকরি করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
বর্তমানে পর্যাপ্ত পড়া শোনা করেও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। কোন ব্যক্তি যদি ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে তবে তিনি প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ১০,২০০ টাকা বেতন পাবে। ১৪ তম গ্রেডের মূল বেতন প্রতি বছর মূল বেতনের ৫% হারে বৃদ্ধি পায়। একজন ১৪ তম গ্রেডে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা তার চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ ১২,৬৮০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পেয়ে থাকে।
১৪ তম গ্রেডের বেতন স্কেল
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে ৪ টি শ্রেণি অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা প্রদান করা হতো। যা নিয়ে সকল কর্মচারীদের মধ্যে নানা বৈষম্য তৈরি হতো। বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে সকল কর্মকর্তাদের বৈষম্য দূর করতে ২০ টি গ্রেডের বেতন স্কেলের একটি গেজেট পাস করে। ১৪ তম গ্রেডের চাকরি শুরুর মূল বেতন ১০,২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ২৪,৬৮০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
১৪ তম গ্রেডের বেতন স্কেলঃ ১০২০০- ১০৭১০- ১১২৫০- ১১৮২০- ১২৪২০- ১৩০৫০- ১৩৭১০- ১৪৪০০- ১৫১২০- ১৫৮৮০- ১৬৬৮০- ১৭৫২০- ১৮৪০০- ১৯৩২০- ২০২৯০- ২১৩১০- ২২৩৮০- ২৩৫০০- ২৪৬৮০/-
১৪ তম গ্রেডে সর্বসাকুল্যে বেতন কত
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা মাসিক মূল বেতনের সাথে সকল ভাতা মিলিয়ে যে বেতন পায় তাকেই মূলত সর্বসাকুল্যে বেতন বলা হয়। একজন ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা প্রতি মাসে মূল বেতনের হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা, যাতায়াত ভাতা এবং মূল বেতন সহ সর্বমোট ১৬,৭৯০ টাকা বেতন পেয়ে থাকে। তবে ১৪ তম গ্রেডের এই সর্বসাকুল্যে বেতন থেকে কিছু টাকা কর্তন করে রাখা হয়।
১৪ তম গ্রেডে ভাতা কত টাকা হয়
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা গণ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাতা পেয়ে থাকে। মাসিক মূল বেতনের সাথে এ সকল ভাতা যুক্ত হয়ে থাকে। মূল বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকারি বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
- ১৪ তম গ্রেডের মূল বেতন প্রতি মাসে ১০,২০০ টাকা
- বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রতি মাসে ৪,৫৯০ টাকা। ১৪ তম গ্রেডের বাড়ি ভাড়া ভাতা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ৬০% ও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার এলাকার জন্য ৫০% এবং অন্যান্য স্থানের জন্য ৪৫% বেতন ভাতা প্রযোজ্য হবে।
- ১৪ তম গ্রেডের চিকিৎসা ভাতা প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা।
- ১৪ তম গ্রেডে যাতায়াত ভাতা প্রতি মাসে ৩০০ টাকা।
- ১৪ তম গ্রেডে প্রতি মাসে টিফিন ভাতা ২০০ টাকা।
১৪ তম গ্রেডের বোনাস কত টাকা পায়
সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৪ তম গ্রেডে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা গন মূল বেতন অনুযায়ী ১০০% হারে ঈদ বোনাস পেয়ে থাকে। অর্থাৎ ১৪ তম গ্রেডে মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা বছরের দুই ঈদে প্রদান করা হয়। এছাড়া মূল বেতন অনুযায়ী ২০% হারে বৈশাখী বোনাস প্রদান করা হয়ে থাকে। সুতরাং ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা ২০% অনুযায়ী চাকরির শুরুতে ২,০৪০ টাকা বৈশাখী ভাতা পায়।
১৪ তম গ্রেডে পাহাড়ি ভাতা কত টাকা দেওয়া হয়
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা এবং উপজেলা সমূহে ১৪ তম গ্রেডে কর্মরত কর্মকর্তাদের মূল বেতন অনুযায়ী পাহাড়ি ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। পার্বত্য জেলা সদরে কর্মরত কর্মকর্তাদের মূল বেতন অনুযায়ী ২০% হারে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাহাড়ি ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া পার্বত্য জেলার উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মূল বেতনের ২০% হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাহাড়ি ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে।
১৪ তম গ্রেডে এক কালীন কত টাকা পায়
সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের সর্বসাকুল্যে বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর্তন করে রাখা হয়। এই কর্তনকৃত অর্থ এবং সর্বোচ্চ ১৮ মাসের ঐচ্ছিক ছুটির বিক্রয়ের টাকা অবসরের পর এক কালীন টাকা হিসেবে প্রদান করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৪ তম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা অবসরের পর প্রায় ২৫ লাখ ৫৪,৩৮০ টাকা এক কালীন ভাতা পেয়ে থাকে।
১৪ তম গ্রেডে পেনশন কত টাকা দেওয়া হয়
প্রত্যেকটি সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরের পর বাংলাদেশ সরকার পেনশনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। পেনশনের আওতায় মূল বেতনের ৫০% হারে পেনশন ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া অবসরের পর চিকিৎসা ভাতা হিসেবে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়। তবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে চিকিৎসা ভাতা হিসেবে ২,৫০০ টাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।
বর্তমানে অনেক শিক্ষিত তরুণের চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চাকরি যোগাড় করতে পারে না। বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণীর চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে অনেকেই চাকরি পাওয়ার লোভে ঘুষের মত জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। বর্তমানে ঘুষের মতো জঘন্য অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেতন গ্রেড নিয়ে আরও দেখুনঃ
সিরিয়াল | বিভিন্ন গ্রেডের বেতন তালিকা |
১ | ৯ম গ্রেডের মোট বেতন কত |
২ | ১০ তম গ্রেডের বেতন কত |
৩ | ১১ তম গ্রেডে বেতন কত |
৪ | ১৪ তম গ্রেডে বেতন কত |
৫ | ১৭ তম গ্রেডে বেতন কত টাকা |
৬ | ২০ তম গ্রেডের বেতন কত |